কলা গাছের রোগ ও তার প্রতিকার - কলা মোটা করার পদ্ধতি

সূর্যমুখী তেলের ৯টি সেরা উপকারিতাকলা গাছের রোগ ও তার প্রতিকার বিষয় সম্পর্কে আমরা আজকে আলোচনা করব। জানতে চান কিভাবে এ ধরনের রোগ গুলো প্রতিরোধ করবেন তাহলে সঙ্গেই থাকুন। কলা চাষের আধুনিক পদ্ধতি সহ কলা গাছের গোড়া ফাটা রোগ ও তার প্রতিকার সম্পর্কে চলুন বিস্তারিত জেনে আসা যাক। 
multiplebd-কলা-গাছের-রোগ-ও-তার-প্রতিকার-কলা-মোটা-করার-পদ্ধতি
কলাবাগান থেকে অধিক ফলন পেতে চাইলে অবশ্যই আপনাকে সঠিক পরিচর্যা করতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে একাধিক রোগ এবং তার প্রতিকার সম্পর্কে। আপনি যদি কলাবাগান করে লাভবান হতে চান তাহলে চলুন জেনে আসা যাক কলা চাষ সম্পর্কে  বিস্তারিত।.

 ভূমিকা

কলা চাষ করে সেখান থেকে লাভবান হতে চাইলে অবশ্যই খুব বেশি গুরুত্ব দিতে হবে কলা গাছের রোগ এবং তার প্রতিকার কিভাবে করা যায় সে বিষয়টিকে। কারণ কলা গাছের রোগ যদি হয়ে থাকে আর আপনি যদি প্রতিকার করতে না পারেন তাহলে সেখান থেকে আপনি কোনই লাভ পাবেন না বরং ক্ষতি সমাপনী হবেন।

আজকের আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনি বিস্তারিতভাবে জেনে যাবেন যে কলা গাছের রোগ হয়ে থাকলে সেগুলো প্রতিকার কিভাবে করবেন এবং কলা বাগানে সার দেওয়ার নিয়ম সহ সাগর কলা চাষ পদ্ধতি এবং আরো একাধিক বিষয় নিয়ে বিস্তারিত। 

কলা গাছের রোগ ও তার প্রতিকার

কলা চাষের ক্ষেত্রে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হচ্ছে কলা গাছের রোগ ও তার প্রতিকার। কলা গাছের যদি রোগ হয়ে থাকে আর এটার যদি প্রতিকার সঠিকভাবে না করেন তাহলে কিন্তু আপনি অল্প সময়ের ভেতরে অনেক টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে যাবে। এজন্য কলা বাগান করতে চাইলে এ বিষয়টি আপনাকে মাথায় রাখতে হবে।

multiplebd-কলা-গাছের-রোগ-ও-তার-প্রতিকার-কলা-মোটা-করার-পদ্ধতি
আমরা অনেকেই জানি না যে কলা গাছের এ সকল রোগ কেন হয় এবং এর প্রতিকার কি কি। আলোচনার এই অংশে এসে আমরা এখন বিস্তারিতভাবে তুলে ধরব কলা গাছে কি ধরনের রোগ গুলো হয়ে থাকে এবং এর প্রতিকার কিভাবে করা যায় সে বিষয়গুলো সম্পর্কে। চলুন তাহলে কলা গাছের এ সকল রোগ এবং প্রতিকার সম্পর্কে এবার বিস্তারিত জেনে আসা যাক। 
  • পানামা রোগঃ কলা গাছে এ রোগটি সাধারণত এক ধরনের ছত্রাকের কারণে সৃষ্টি হয়। কলা গাছে যখন এই রক্ত হবে তখন প্রথমত বয়স্ক পাতাগুলো হলুদ হবে এবং পরবর্তী সময়ে গাছের যে কচি পাতাগুলো রয়েছে এগুলো পর্যায়ক্রমে হলুদ হবে। এগুলোর পাশাপাশি পাতার ভোটার অংশ নিচের গুলোতে কিন্তু ঝুলে পড়বে এবং গাছ মারা যাবে। অনেক সময় আবার দেখা যায় যে গাছ লম্বাবলম্বি ভাবে ফেটে যাচ্ছে এবং ভেতরে থাকা অঙ্গ করতে হলতে বাদামের রং হয়ে আছে।
  • রোগের প্রতিকারঃ কলা গাছের এই রোগ প্রতিকার করার জন্য আপনি আক্রান্ত গাছগুলোকে সম্পূর্ণভাবে উঠিয়ে ফেলতে হবে। এছাড়া যারা সংগ্রহ করার সময় অবশ্যই আপনাকে রোগমুক্ত গাছ থেকে এগুলো সংগ্রহ করতে হবে। কলা গাছের এই রোগ প্রতিরোধ করতে কলা গাছের মাটিতে পিএইচ না থাকলে তাও বৃদ্ধি করতে হবে। চারা রোপন করার ২৫ থেকে ৩০ দিন পরে আপনার কার্বন ডাইজিন জাতীয় ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে পারেন।
  • সিগাটোগা রোগঃ এক ধরনের সার্কাসপুরামিস নামক ছাত্রদের জনিত কারণে কলা গাছের রোগটি হয়ে থাকে। কলা গাছের এ রক্তের লক্ষণ হচ্ছে কলা গাছের থাকা তৃতীয় এবং চতুর্থ কচি পাতা গুলোতে ছোট ছোট আকারের হলুদ দাগ হয়।অনেক সময় দেখা যায় যে অতি পরিমাণে আক্রমণ করা হলে সম্পূর্ণ পাতায় শুকিয়ে যায়।
  • প্রতিকারঃ রোগ গুলো দেখা দিলে অবশ্যই আক্রান্ত গাছ থেকে সম্পূর্ণভাবে তুলে ফেলতে হবে এবং তা পরিয়ে ফেলতে হবে।বিশেষ করে আক্রমণ হওয়ার প্রাথমিক পর্যায়ে আপনি কলা গাছের এই পাতাগুলো কেটে কমিয়ে দিবেন। এবং দুই থেকে তিন মাস পরে কলা গাছের নিচের পাতাগুলোকে কেটে পুড়িয়ে ফেলবেন। জমিতে এ ধরনের আচরণগুলো দেখা দিলে ছত্রাক নাশক স্প্রে করতে হবে।
  • গুচ্ছ মাথা রোগঃ সাধারণত কলা গাছের এই রোগ গুলো হয়ে থাকে ভাইরাসজনিত কারণে। কলা গাছ যখন এই ধরনের রোগে আক্রান্ত হয় তখন কলা গাছের বৃদ্ধ গুলো অনেকটাই কমে যায় এবং পাতাগুলো গুচ্ছ হয়ে থাকে। পাতাগুলোর সাইজ আকারে খাটো হয় এবং অপ্রশস্ত হয়ে থাকে। এছাড়াও পাতার কিনারা গুলো উপরের অংশের দিকে বাঁকানো থাকে এবং দেখতে অনেকটা হলুদ রং হয়ে থাকে।
  • প্রতিকারঃ এ ধরনের গাছ যখনই দেখতে পারবেন সঙ্গে সঙ্গে পাতা না কেটে ভ্রম পুরো গাছে কেটে তারপরে ফেলতে হবে।যত ভাইরাসজনিত কারণে এ ধরনের রোগ গুলো হয় এজন্য আপনাকে ভাইরাসের বাহক যে পোকা গুলো আছে অর্থাৎ এবং থ্রিজি প্রকাশহ আরো যে একাধিক পোকা গুলো আছে এগুলো দমন করতে আপনাকে ভাইরাস জনিত ঔষধ গুলো ব্যবহার করতে হবে।
  • কলার বিটল পোকাঃ সাধারণত কলা গাছে এ ধরনের পোকা গুলো বেশি হয়ে থাকে অগাস্ট থেকে সেপ্টেম্বর মাসে। পূর্ণাঙ্গ পোকা গুলো গাছের পাতা গুলোকে করে করে খেয়ে ফেলে যে কারণে কলা পাতা কিংবা ফলের উপরে এক ধরনের কালো দাগ হয়।
  • প্রতিকারঃ কলা গাছে এ ধরনের প্রকার রোগ গুলো দেখা দিলে আপনি স্প্রে ব্যবহার করবেন যেমন, - অ্যান্ড সালফান অথবা কার্বারিল।

কলা চাষের উপযুক্ত সময়

টাচ করে যদি লাভবান হতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে কলা গাছের রোগ ও তার প্রতিকার বিষয়টি ভালোভাবে জানতে হবে। এর পাশাপাশি কিন্তু অবশ্যই কলা চাষ করতে হবে উপযুক্ত সময়ে। চলুন এ বিষয়ে বিস্তারিত জেনে আসা যাক। যেকোনো ফসলের ক্ষেত্রেই কিন্তু উপযুক্ত সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ সঠিক সময়ে কলা চাষ করা না হলে।

ফলন ভালো হবে না এবং আপনি ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। আমাদের বাংলাদেশে বর্ষাকাল এবং চরম শীত ছাড়া  সারা বছরের সব সময়  কলার চাষ হয়ে থাকে তবে কলা চাষ করার ক্ষেত্রে সব থেকে ভালো সময় হচ্ছে বর্ষার শেষের সময় এবং আশিক এবং কার্তিক মাসে। এ সময়গুলোতে যদি কলা চারা লাগানো যায় তাহলে কিন্তু ফলন বেশি হয়।

আচ্ছা আপনি চাইলে কলা চাষ করার জন্য বেছে নিতে পারেন মা এবং বৈশাখ মাস কারণ এই সময়েও কলার চারা লাগানো যায় ও ফলন ভালো পাওয়া যায়। এছাড়াও কলার চারা রোপট করার জন্য কিন্তু মৌসুমের তিনটি পর্যায়ে বেছে নেওয়া যেতে পারে। প্রথমটি হচ্ছে জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসের সময় পর্যন্ত। দ্বিতীয় মৌসুম হিসেবে আপনি কলারোপণ করতে পারেন মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত।

এবং সর্বশেষ মৌসুম হিসেবে আপনি বছরের এই শেষ সময়টি বেছে নিতে পারেন যেমন সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর মাস। কলা চাষের এই উপযুক্ত সময় গুলোতে যদি আপনি কলা চাষ করতে পারেন তাহলে আপনি অনেকভাবেই সফলতা লাভ করবেন। আশা করছি বিষয়গুলো আপনি খুব ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন। 

কলা মোটা করার পদ্ধতি

অনেক সময় দেখা যায় যে কলারোপণ করার পরও কলা গাছ ঠিকভাবে মোটা হচ্ছেনা এবং কলার সাইজও অনেকটা ছোট এবং মোটা হয় না যে কারণে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া যায় না এবং অনেক ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। তাই করা মোটা করার পদ্ধতি সম্পর্কে এখন আমরা আপনাকে জানিয়ে দিব।

আপনারা যারা চিন্তা করছেন যে কলা গাছ লাগিয়েছি কিন্তু কলা এখনো মোটা হচ্ছেনা কেন এবং এটা কিভাবে করা যাবে তাদের জন্য মূলত কলা মত করার পদ্ধতিটি নিচে উপস্থাপন করা হলো। কলা গাছের গলা মোটা করার জন্য অবশ্যই গাছের পুষ্টিগুণ শতভাগ থাকতে হবে। কারণ কলা গাছে যদি পুষ্টি এবং শক্তি  না থাকে কলা গাছের এই পুষ্টি  জনিত অভাব হওয়ার কারণে।

শক্তির অভাবে কিন্তু কলা গাছের পাশাপাশি কলা মোটা হবে না। এজন্য কলা মোটা করতে চাইলে আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে যেন কলা গাছের সাথে হোক পুষ্টি উপাদান গুলো থাকে এবং কলা গাছ যেন তাজা ও শক্তিশালী থাকে। এছাড়াও কলা তাড়াতাড়ি মোটা এবং বড় করার জন্য আপনি ব্যবহার করতে পারেন বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক এবং স্প্রে।

এছাড়াও কিন্তু কলা গাছের এই কলা মোটা করতে চাইলে আপনারা কীটনাশক স্পে করতে পারেন যা অবশ্যই কীটনাশকের দোকানদারের পরামর্শ করতে হবে। এজন্য আপনি যদি চান যে কলার রং ভালো হোক এবং কলাও তাড়াতাড়ি মোটা এবং বড় হয়ে উঠুক তাহলে এর জন্য আপনি নিকটস্থ অভিজ্ঞ কোন কীটনাশকের দোকানদারের সঙ্গে গিয়ে পরামর্শ করবেন।

তাহলে তিনি আপনাকে এ বিষয়ে সম্পর্কে একাধিক তথ্য দিয়ে দিবে। এছাড়া আপনি যদি মনে করেন যে এ বিষয়ে সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য জানবেন তাহলে আপনি কিন্তু আপনার উপজেলার কৃষি অধিদপ্তরে গিয়েও যোগাযোগ করতে পারেন।

সাগর কলা চাষ পদ্ধতি

ইতিপূর্বে আমরা বিস্তারিতভাবে জেনেছি যে কলা গাছের রোগ ও তার প্রতিকার কিভাবে করা যায়। আপনারা অনেকেই আমাদের কাছে জানতে চেয়েছিলেন যে সাগর কলা কিভাবে চাষ করতে হয়। এর জন্য আলোচনার এই অংশের বিস্তারিতভাবে তুলে ধরব সাগর কলা চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে। কলা চাষের আধুনিক পদ্ধতি অবলম্বন করলে কিন্তু সফলতার হার অনেক বেশি পাওয়া যায়। 
  • জমি তৈরি এবং চারা রোপনঃ সাগর কলা চাষ করার জন্য সর্বপ্রথম আপনাকে জমির তৈরি করতে হবে এবং চারা  রোপন করতে হবে। সাগরকলা চাষ করার জন্য জমি অবশ্যই ভালো করে চাষ দিয়ে নরম করে নিতে হবে। তারপর গর্ত তৈরি করার জন্য ২*২ মিটার দূরত্বে আপনাকে গত স্থাপন করতে হবে এবং গর্তের উপরের মাটিগুলো আলাদা করে নিতে হবে। 
  • চারা সংগ্রহ এবং রোপণঃ  চারা সংগ্রহ করার সময় খেয়াল রাখবেন যেন যে বাগান থেকে যারা সংগ্রহ করছেন তার জন্য অনেক বেশি পুরাতন না হয়। কারণ পুরনো কলা বাগানের গন্ধ গুলো পোকামাকড়ের আক্রান্ত হতে পারে। এজন্য সঠিকভাবে চারা সংগ্রহ করবেন এবং রোপন করার পূর্বে গর্তে ভালো করে সার প্রয়োগ করতে হবে। কলা গাছের চারা সাধারণত বছরে তিন মৌসুমে রোপন করা যায়। এজন্য আপনি চাইলে জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস সময় পর্যন্ত এবং মার্চ থেকে আবার মধ্য মে মাস পর্যন্ত এবং শেষ পর্যায়ে গিয়ে মধ্য সেপ্টেম্বর থেকে মধ্য নভেম্বর পর্যন্ত রোপন করাতে পারবেন। 
  • সার প্রয়োগঃ কলা গাছে কিন্তু সার প্রয়োগ বিষয়টি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য সাগর কলা চাষ করার জন্য আপনি যথাক্রমে গোবর এবং ইউরিয়ার, টিএসপি, জিপসাম  সালফেট, এমওপি, বোরিক এসিড,গুলোর সঠিক পরিমাণে দিবেন এক্ষেত্রে আপনি কীটনাশকের দোকানে গিয়ে দোকানদারের পরামর্শ এগুলো দিবেন। 
  • অন্তর্বর্তীকালীন পরিচর্যাঃ কলা ছাড়া রোপন করার পরে আপনাকে অবশ্যই ভালোভাবে পরিচর্যা করতে হবে এবং প্রয়োজনে শেষ দিতে হবে। সঠিকভাবে যদি শেষ ব্যবস্থা না হয়ে থাকে এবং প্রযোজ্য যদি ভালো না করেন তাহলে এখান থেকে আপনি কোন সফলতা পাবেন না। এজন্য শুকনো মৌসুমগুলোতে ১৫ থেকে ২০ দিন পর পরই কিন্তু শেষ দিতে হবে। 
  • ফলের যত্নঃ কলা গাছের থোর আসতে এগুলো যেন বাতাসে ভেঙ্গে না যায় এজন্য আপনি বাঁশের খুঁটি ব্যবহার করতে পারেন বাতাসের বিপরীত স্থানগুলোতে। এজন্য বাতাসের বিপরীত দিকগুলো থেকে আপনি বাসায় এর খুঁটিগুলো গাছের দিকে ঠেস দিয়ে রাখবেন। 
  • পোকা এবং রোগ দমনঃ পোকামাকড় এবং রোগ দমন বিষয়টি কিন্তু বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ কলা গাছের পোকামাকড় এবং রোগ যদি সঠিকভাবে দমন না করতে পারেন তাহলে কিন্তু একসময় সফল গাছে আক্রান্ত হয়ে যাবে এবং ফলন ভালো হবে না। তাই অবশ্যই আপনাকে পোকা এবং রোগ দমন করতে হবে সঠিকভাবে। 

কলা বাগানে সার দেওয়ার নিয়ম

কলা বাগান থেকে অধিক ফলন পেতে চাইলে এবং কলাগাছের সঠিক পরিচয় করার জন্য সার প্রয়োগ করাটা অনেক জরুরী। এজন্য আপনারা যারা জানেন না যে কলা বাগানে কিভাবে সার দিতে হয় তাদের জন্য কিন্তু আর্টিকেলের এই অংশটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কলা গাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে সার প্রয়োগ করতে হবে সঠিকভাবে জন্য অধিক পরিমাণে সার না হয় এবং সারের পরিমাণও যেন কম নয়।

বিশেষ করে যখন কলা গাছের চাষ করার জন্য আপনারা জমি প্রস্তুত করবেন ঠিক এই সময় গুলোতে প্রতিটি গর্তে আপনি গোবর সার অথবা জৈব সার ব্যবহার করবেন। যা মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি অধিক ফলন নিয়ে আসতে পারে। কলার চারা রোপন করা হয়ে গেলে তার ৩০ দিন পর আপনি জমি অনুযায়ী যথাক্রমে ৫০ থেকে ১০০ গ্রাম করে ইউরিয়া।

৫০ থেকে ৬০ গ্রাম টিএসপি, এবং ১০০ থেকে দেড়শ গ্রাম এমওপি সার প্রয়োগ করবেন। চারা রোপন করার যখন দুই থেকে তিন মাস হয়ে যাবে শেষ সময়গুলোতে গাছে 75 দিতে হবে এজন্য আপনি এই সময়ে আবার ২০০ থেকে ২৫০ গ্রাম করে ইউরিয়া সার  ৫০ থেকে ১০০ গ্রাম টিএসপি এবং এমওপি সার দিবেন ১০০ থেকে ২০০ গ্রাম করে।

এবার যখন গাছের বয়স চার থেকে পাঁচ মাস হয়ে যাবে তখন সারের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হবে। এ সময়ে গুরুতে আপনি ইউরিয়া দিবেন ২০০ থেকে ৩০০ গ্রাম এবং এমওপি সার প্রয়োগ করবেন ২০০ থেকে ৩০০ গ্রাম করে। কিভাবে যখন গাছে ফল আসতে শুরু করবে এই সময়গুলোতেও কিন্তু সার প্রয়োগ করতে হবে যেন ফলন ভালো হয়।

এজন্য যথাক্রমে ইউরিয়া দিবেন ১০০ থেকে ২০০ গ্রাম এবং এফ ও পি ৬০ দিবেন ২০০ থেকে ৩০০ গ্রাম করে। এতে করে সঠিকভাবে সার প্রয়োগ করা হলে অনেক ফলন হবে এবং আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া সম্ভব হবে। উল্লেখিত নিয়ম গুলো অনুসরণ করে আপনারা কলা বাগানে ছাড় দিতে পারেন আর হ্যাঁ আপনারা চাইলে কিন্তু অবশ্যই কীটনাশকের দোকানে গিয়ে তার পরামর্শ নিয়ে সার প্রয়োগ করবেন এতে কিন্তু সবথেকে বেশি উপকারিতা পাওয়া যাবে। 

কলা গাছের সিগাটোকা রোগের প্রতিকার

আলোচনা করছিলাম কলা গাছের রোগ ও তার প্রতিকার সম্পর্কে। কলা গাছের যে রোগ গুলো আছে তার ভেতর থেকে অন্যতম একটি রোগ হচ্ছে সিগাটোকা রোগ। কলা গাছের এই রোগটি হয়ে থাকলে আপনি যদি সঠিকভাবে এর প্রতিকার না করেন তাহলে কিন্তু কলাবাগানের ফলন অনেক কমে যাবে এবং আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। 

সিগাটোকা রোগ এর লক্ষণ 

  • প্রাথমিক পর্যায়ে কলাগাছের পাতাগুলো হলুদ এবং বাদামী রং হবে
  • কিছুদিন হয়ে গেলে পাতাগুলো ধীরে ধীরে মরে যাবে 
  • এই সময়ে ফলন অনেক কম হয়ে যায় যে কারণে আপনাকে এই লক্ষণগুলো বুঝতে হবে। 
  • মূলত গাছের ছত্রাক জনিত রোগ থেকে এ রোগগুলো হয়ে থাকে। 
  • কলা গাছের পাতাতে ছোট ছোট আকারে হলুদ দাগ হয়ে থাকে। 

রোগ প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণ

  • এ ধরনের রোগ গুলো প্রতিরোধ করার জন্য সর্বপ্রথম যে পাতাটি আক্রান্ত রয়েছে তা সম্পূর্ণভাবে সরিয়ে পুড়িয়ে ফেলবেন 
  • কলাবাগানের চাষের জায়গাগুলো সব সময় পরিষ্কার রাখবেন 
  • ছত্রাক নাটক ব্যবহার করার মাধ্যমে এ ধরনের প্রকার গুলো থেকে মুক্তি মিলতে পারে 
  • কীটনাশক স্পে যখন করবেন তখন কলার পাতাতেও কিছুটা স্প্রে করে নিবেন 
  • কলাবাগানে অতিরিক্ত পরিমাণে পানি জমতে দিবেন না 
  • কলা বাগানে পর্যাপ্ত পরিমাণে আলো বাতাসের ব্যবস্থা রাখবেন 

কলার ছত্রাকজনিত রোগ কি কি?

কলা গাছে যে ধরনের রোগ গুলো হয়ে থাকে তার ভেতর থেকে অধিক হলো ভাইরাস এবং ছত্রাক জনিত রোগ। এজন্য কলার ছত্রাক জনিত রোগ গুলো কি কি এ বিষয়ে সম্পর্কে যদি না জেনে থাকেন চলুন তাহলে এখনই জেনে আসা যাক বিস্তারিত। কলা গাছে যখন ছত্রাক জনিত রোগগুলো হবে তখন অবশ্যই আপনাকে এগুলো প্রতিকার করতে হবে। 

কলার ছাত্ররজনিত রোগ হলঃ
  • সিগাটোগা রোগ 
  • পানামা রোগ 
  • বিটল পোকা রোগ 

প্রতিকার

  • সিগাটোগা রোগঃ কলা গাছের এর একটি প্রতিরোধ করার জন্য আক্রান্ত গাছ সম্পূর্ণভাবে তুলে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। এবং আক্রান্ত গাছের ছোট চারা ব্যবহার করা যাবে না। 
  • বিটল প্রকার রোগঃ এ ধানের রোগ গুলো প্রতিরোধ করার জন্য বারবার যে কলা বাগান গুলো রোগে আক্রান্ত হয় এ ধরনের বাগানে কলা কখনো চাষ করা যাবে না। রোগগুলো দমন করার জন্য প্রয়োজনীয় কীটনাশক এবং ছত্রকনাশক ব্যবহার করতে হবে। 

কলা চাষের আধুনিক পদ্ধতি

কলা চাষের আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করার মাধ্যমে কিন্তু বর্তমান সময়ে চাষিরা অনেক বেশি লাভবান হচ্ছে। এজন্য আপনি যদি না জেনে থাকেন যে কলা চাষের ক্ষেত্রে কিভাবে আপনি আধুনিক পদ্ধতি গুলো ব্যবহার করবেন তাহলে চলুন এ বিষয়ে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে আসা যাক। কলা চাষ করার ক্ষেত্রে বর্তমান সময়ে দেখা যাচ্ছে।

উন্নত প্রযুক্তি এবং পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করার মাধ্যমে উচ্চ উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে এবং পরিবেশবান্ধব হচ্ছে। এছাড়ো কলা চাষ করার ক্ষেত্রে যদি সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করে আধুনিক পদ্ধতিতে চাষ করা হয় তাহলে এক্ষেত্রে রোগবালাই কম হয় এবং  অধিক ফলন পাওয়া সম্ভব হয়।
multiplebd-কলা-গাছের-রোগ-ও-তার-প্রতিকার-কলা-মোটা-করার-পদ্ধতি
  • গর্ত তৈরিঃ গর্ত গুলো ভালোভাবে তৈরি করতে হবে এবং গর্তের মা ভাবে এক ফিট করে। গর্তের ভেতরে পর্যন্ত পরিমাণে জৈব সার দিতে হবে এবং এর পাশাপাশি পটাশ ও ডিএপি সহ আরো পর্যাপ্ত সার গুলো দিতে হবে।
  • সারির দূরত্বঃ একটি সারি থেকে অন্য একটি সারির দূরত্ব হতে হবে ৫ ফিট করে। কলা কাজগুলো শাড়ি করে লাগানো হলে কিন্তু ফলন ভালো হয় এবং রোগগুলো কম হয়ে থাকে।
  • চারা রোপনঃ গর্তগুলো তৈরি করা হয়ে গেলে এবার চারা রোপন করতে হবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে ভালো মানের চারা নির্বাচন করতে হবে কারণ ভালো মানের চারা যদি রোপন করানো হয় তাহলে কিন্তু গাছও ভালো হবে না এবং ভালো না ভালো হবে না।
  • পরিচর্যাঃ কলা গাছ রোপন করা হয়ে গেলে অবশ্যই পরিচর্যা গুলো সঠিকভাবে করতে হবে। কলা গাছের পরিচর্যা যদি অবহেলা করা হয় তাহলে এক্ষেত্রে কিন্তু কলাগাছ মারাও যেতে পারে। এজন্য অবশ্য কলা গাছ লাগানোর পরে আপনাকে সঠিকভাবে কলা গাছের সেচ এবং সার প্রয়োগ করতে হবে ।

নিচু জমিতে কলা চাষ করার সহজ উপায়

আজকেরটি যদি মনোযোগ দিয়ে পড়ে থাকেন তাহলে নিশ্চয়ই আপনি বিস্তারিতভাবে জেনেছেন কলা গাছের রোগ ও তার প্রতিকার সম্পর্কে। আপনারা অনেকেই আমাদের কাছে জানতে চেয়েছিলেন যে নিচু জমিতে কিভাবে কলা চাষ করা যাবে। চলুন তাহলে সরাসরি জেনে আসা যাক নিচু জমিতে কলা চাষ করার সহজ উপায়।

বিদ্যুৎ জমিতে কলা চাষ করার জন্য অবশ্যই মাঠে কেমন রয়েছে সেটা পর্যবেক্ষণ করে দেখতে হবে। এক্ষেত্রে কিন্তু আপনাকে কলার জাত নির্বাচন করতে হবে। কারণ কলার এমন অনেক জাত রয়েছে যেগুলো কিন্তু সব ধরনের মাটিতে হয় না। মাটির আকার এবং গঠন অনুযায়ী কলার জাত নির্বাচন করুন। দোআঁশ এবং বেলে 10 মাটিতে কিন্তু কলা চাষ করা যেতে পারে।

বিশেষ করে নিচু জমিতে কলা চাষ করার জন্য খেয়াল রাখতে হবে যেন পর্যাপ্ত পরিমাণ আলো বাতাসের ব্যবস্থা থাকে। পাশাপাশি কিন্তু কলার চাষ দেওয়াটাও খুব জরুরী। কলা চাষ করার জন্য জমির নির্বাচন করা হয়ে গেলে আপনাকে সঠিক ভাবে চাষ দিতে হবে। কালার চাড়া রোপন এবং কলার পরিচর্যা বিষয়গুলো কিন্তু বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

কলার চাড়া সঠিকভাবে রোপন করতে হবে এবং রোপন পরবর্তী সময়ে এগুলো সঠিকভাবে পরিচর্যা করতে হবে। অন্তর্বর্তী কালীন পরিচর্যা হিসেবে সঠিক ভাবে শেষ দিতে হবে এবং সার প্রয়োগ করতে হবে। এজন্য টিএসপি, ইউরিয়া, এমওপি, পটাশ গোবর সার বা দুই বছর এগুলো প্রয়োগ করতে হবে। অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যেন কলা গাছের রোগ না হয়।

কলা গাছে অনেক ধরনের রোগ হতে পারে যেমন সিগাটোগা,বিটলপোকা,গুচ্ছ মাথা,পানামা রোগ ইত্যাদি। এজন্য এ ধরনের রোগ গুলো দেখা দিলে সাথে সাথে কীটনাশকের দোকানদারের সঙ্গে পরামর্শ নিয়ে তারপরে আপনাকে এগুলোর প্রতিরোধ করতে হবে। 

কলা গাছের গোড়া ফাটা রোগ

বিভিন্ন কারণবশত কারণে কলা গাছের গোরা ফাটা রোগ হয়। আপনার জার্সি তো কলা বাগানে যদি এ ধরনের রোগ গুলো হয়ে থাকে তাহলে বুঝবেন কিভাবে এবং রোগগুলো হওয়ার কারণ এবং প্রতিকার কি  কি সে বিষয়গুলো নিয়ে থাকছে আর্টিকেলের যে অংশটি। 

গোড়া ফাটা রোগ হওয়ার কারণ

  • পুষ্টির অভাবঃ কলা গাছে পুষ্টির অভাবজনিত কারণ হলে দেখা যায় যে গোড়া ফাটার রোগ হচ্ছে। বিশেষ করে যখন ক্যালসিয়াম জনিতকারণের অভাব হয় তখন মূলত এই রোগটি হয়ে থাকে। 
  • পোকামাকড়ঃ মূলত পোকামাকড়ের আক্রমণ যখন কলাগাছে বেশি হয় তখন কিন্তু এই সমস্যাটি দেখা যায়। বিশেষ করে রুট নেমাটোড প্রকার আক্রমণ জনিত কারণে এই সমস্যাটি হতে পারে। 
  • অতিরিক্ত পানি জমাঃ কলা বাগানে যখন অতিরিক্ত পানি জমে থাকে এবং নিষ্কাশন ব্যবস্থা যদি ভালো না হয় তাহলে এক্ষেত্রে এ সমস্যাটি হয়ে থাকে। 
  • মাটির অম্লতাঃ মাটির অম্লতা যখন কম হয় তখন মূলত এই সমস্যা গুলোর প্রভাব বেশি হয়। মাটির পিএইচ মাত্রা যদি কমে যায় তাহলে এগুলো হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। 

প্রতিকার ও প্রতিরোধ 

  • সঠিক পরিমাণে পানি দেওয়াঃ জমিতে শেষ ব্যবস্থা সঠিক পরিমাণে থাকতে হবে। অতিরিক্ত ভাবে পানিও দেওয়া যাবে না এবং পানির পরিমাণ যেন কমানো হয় সে বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে।
  • পুষ্টির সঠিক মাত্রাঃ জমিতে যৌনপুষ্টির অভাব না থাকে এজন্য অবশ্যই জমিতে প্রয়োজনীয় মাত্রায় কীটনাশক প্রয়োগ করুন।
  • রোগ প্রতিরোধের জাত নির্বাচনঃ জমিতে কলা চাষ করার পূর্বে অবশ্যই আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে যেন চারা গুলো রোগ প্রতিরোধী হয়ে থাকে। এজন্য যে সকল জাতগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি এ ধরনের জাত বেছে নিন।
  • পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণঃ জমিতে অবশ্যই পোকামাকড়ের আক্রমণ যেন না হয় এবং পোকামাকড় যদি আক্রমণ করে থাকে তাহলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় স্পে এবং কীটনাশক গুলো ব্যবহার করতে হবে।

লেখকের পরামর্শ

কেউ পাঠক বন্ধুরা আজকের আর্টিকেলটি পড়ার মাধ্যমে আপনি জেনে গেছেন যে কিভাবে কলা গাছের রোগগুলো প্রতিরোধ করবেন। আর্টিকেলের পুরো অংশ জুড়ে আমরা জানিয়েছি একাধিক পরামর্শ যদি কোথাও বুঝতে অসুবিধা হয় তাহলে আপনি আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন। কলা গাছের চারা রোপন করার পূর্বে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন যেন চারা গুলো সুস্থ ও সবল থাকে।

আমাদের আজকের আর্টিকেলটি পরে যদি আপনি বিন্দুমাত্র উপকৃত হয়ে থাকেন বা আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আর্টিকেলটি বেশি বেশি শেয়ার করে দেন। আর হ্যাঁ এ ধরনের তথ্য গুলো পেতে নিয়মিত কোন আমাদের এই www.multiplebd.com ওয়েবসাইটে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মাল্টিপল বিডির নিতিমালা মেনে কমেন্ট করুন । প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url