ন্যানো টেকনোলজি কি? এর প্রয়োগ, ব্যবহারের সুবিধা অসুবিধা
ওয়াইফাই কি এবং এর সুবিধা অসুবিধান্যানো টেকনোলজি কি? এর প্রয়োগ, ব্যবহারের সুবিধা অসুবিধা নিয়ে বিস্তারিত
বিষয় সমূহ আজকের এই পোস্টে আমরা আলোচনা করতে যাচ্ছি। আপনি হয়তো জানেন না ন্যানো
টেকনোলজির এসব বিষয়গুলো সম্পর্কে। চিন্তার কোন কারনে কারন আজকের এই পোস্ট পড়ার
মাধ্যমে আপনি এ বিষয়গুলো ভালো ভাবে জেনে যাবেন। তাই অবশ্যই আপনার অজানা
বিষয়গুলো জানার জন্য পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন ।
বর্তমান সময়ে এসে ন্যানো টেকনোলজি বিজ্ঞানের এক অন্যতম আবিষ্কার। যা আমাদের এই পৃথিবীকে আরও অনেক গুণ এগিয়ে নিয়েছে। যে বিষয়গুলো আপনার অবশ্যই জানা দরকার। তাইতো আজকের এই আর্টিকেল জুড়ে আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি ন্যানো টেকনোলজি কি? এর প্রয়োগ, ব্যবহারের সুবিধা অসুবিধা নিয়ে বিস্তারিত। তাহলে চলুন এবার শুরু করা যাক -
ভূমিকা
ন্যানো টেকনোলজি শব্দটির ন্যান শব্দটি এসেছে গিরিক শব্দ ন্যানোশ থেকে। যার
অভিধানিক অর্থ হিসেবে আমরা নিতে পারি বামন বা খাটো। ন্যানো
হচ্ছে একটি পরিমাপের একক। সাধারণ ন্যানো প্রযুক্তি এমন সব বিষয় নিয়ে কাজ
করে যা সাধারণত কোন একটি মাত্রায় ১০০ ন্যানোমিটার থেকে ছোট হয়।
ন্যানো টেকনোলজি কি ?
ন্যানো টেকনোলজির ব্যবহার ব্যবহার সম্পর্কে জানতে হলে তার আগে অবশ্যই আপনাকে
জানতে হবে ন্যানো টেকনোলজি কি ? নয়তো আপনি এর সঠিক ব্যবহার করতে পারবে না। তাহলে
চলুন এবার জেনে আসে যাক ন্যানো টেকনোলজি কি এ সম্পর্কে বিস্তারিত -
ন্যানো টেকনোলজি হল এমন একটি প্রযুক্তি যেখানে ন্যানোমিটার স্কেলে একটি বস্তুকে
নিপুণভাবে ব্যবহার করা যায়। এর মানে হচ্ছে এই কোন বস্তুকে পরিবর্তন বা ধ্বংস ও
সৃষ্টি করা যায়। ন্যানো প্রযুক্তি এমন সব কাঠামো নিয়ে কাজ করে যা অন্তত একটি
মাত্রায় ১০০ মিটার থেকে ছোট হয়। ন্যানো প্রযুক্তি বহুমাত্রিক হয়ে থাকে।
এর সীমানা সেমিকন্ডাক্টর পদার্থবিদ্যা থেকে বর্তমান আধুনিক স্বয়ং-সংশ্লেষণ
প্রযুক্তি পর্যন্ত । ন্যানোমিটার স্কেলে যে সমস্ত টেকনোলজি সম্পর্কিত সেগুলো
হচ্ছে ন্যানো প্রযুক্তি। ন্যানো টেকনোলজিকে সংক্ষেপে ন্যানোটেক বলা হয়। ন্যানো
টেকনোলজির ক্ষেত্রে দুইটি প্রক্রিয়া রয়েছে। একটা হচ্ছে উপর থেকে নিচ অন্যটি
হচ্ছে নিচ থেকে উপর।
অর্থাৎ , Top-Down ও Bottom-Down। টপ ডাউন পদ্ধতিতে সাধারণত কোন জিনিসকে কাটা হয়
এবং সেটি ছোট করে নির্দিষ্ট আকার দেওয়া হয়। আর বটম পদ্ধতি হচ্ছে ক্ষুদ্র
ক্ষুদ্র ছোট ছোট সব জিনিসকে দিয়ে বড় কোন জিনিস তৈরি করা হয়।ন্যানোটেকনোলজিতে
বিভিন্ন ছোট ছোট সব জিনিস যে তৈরি করা হয়, প্রয়োজনিয় সব বস্তু।
বর্তমান সময়ে খেয়াল করে দেখবেন হার্ডডিক্সের তথ্য সংরক্ষণের ক্ষমতা অনেক গুণ
বেড়ে যাচ্ছে। আর আমাদের ব্যবহৃত এই হার্ডডিক্সেও বর্তমানে ব্যবহৃত হচ্ছে
ন্যানোটেকনোলজি। যত দিন যাচ্ছে ততই নাটক টেকনোলজির ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ন্যানো টেকনোলজির প্রয়োগ
ন্যানো টেকনোলজির এমন সব আশ্চর্যজনক ব্যবহার রয়েছে যা আপনাকে চমকে দিবে। আপনি হয়তো জানেন না এসব ব্যবহার সম্পর্কে। তাহলে চলুন এবার জেনে আসি ন্যানো টেকনোলজির প্রয়োগ সম্পর্কে -- কম্পিউটিং এর ক্ষেত্রেঃ আধুনিক সময়ে এসে ন্যানোটেকনোলজি ব্যবহার করে এমন সব কম্পিউটার তৈরি করা হচ্ছে যা খুব সহজেই ভাজ করে রাখতে পারবেন পকেটে। আবার আপনার প্রয়োজনে খুব সহজে পকেট থেকে বের করে ভাজ খুলে কাজ করতে পারবেন। কম শক্তি খরচ কম্পিউটারে মেমোরি গতি দক্ষতা বৃদ্ধি ইত্যাদির ক্ষেত্রেও এটা ব্যবহার হয়।
- চিকিৎসাঃ ন্যানো টেকনোলজির ব্যবহার চিকিৎসা ক্ষেত্রে যোগ করেছে এক অনন্য মাত্রা। স্মার্ট ডাগ তৈরি ও ক্যান্সার কোর্স ধ্বংস করতে ন্যানা টেকনোলজির ব্যবহার হচ্ছে অনেক গুণ। যার ফলে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগে খুব সহজেই ওষুধ পৌঁছে যাচ্ছে। যেটি ব্যবহারের জন্য ব্যবহৃত হয় ন্যানো সুঁচ।
- খাদ্য শিল্পঃ শুধু চিকিৎসা কিংবা তথ্য প্রযুক্তিই নয, খাদ্যশিল্পে ও ন্যানোটেকনোলজির ব্যবহার হচ্ছে। খাদ্যজাত দব্যের প্যাকেজিং ও ভিন্ন রকম স্বাদ তৈরি করতেও ব্যবহার হচ্ছে। এক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় ন্যানোম্যাটেরিয়াল ।
- রাসায়নিক শিল্পেঃ ইস্পাতের চেয়ে অনেক গুন বেশি শক্তিশালী মেডেল তৈরিতে,বিভিন্ন বস্তুর উপর পোলেপ তৈরিতেও ব্যবহৃত হচ্ছে ন্যানোটেকনোলজি ।
- ইলেকট্রনিক শিল্পেঃ ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতির ন্যূনতম বিদ্যুৎ খরচ ওজন ও আকৃতি কমানো সহ বিভিন্ন কার্যক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি করতে ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহৃত হচ্ছে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে ন্যানো টেকনোলজি দ্বারা ব্যবহৃত ব্যাটারি সোলার সেল ইত্যাদির মাধ্যমে সৌরশক্তি বেশি কাজে লাগানো যায়।
- ন্যানো চিপ ও মনিটর তৈরিতেঃ ভবিষ্যতে এমন এক সময় আসবে যখন কম্পিউটার চিফ তৈরি করার জন্য কার্বন ন্যানো টিউব ব্যবহার করা হবে। এখন তো ন্যানো টেকনোলজির ফলে এমন সব পাতলা টিভি বাজারে এসেছে যা ক্যালেন্ডারের মতো দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখা যায়।
- কৃষি ক্ষেত্রেঃ কৃষি ক্ষেত্রে ন্যানোটেকনোলজির ব্যবহার বহুগুণ। জমিতে কৃষকরা রাসায়নিক সার হিসেবে এমপি ফসফরাস পটাশিয়াম ব্যবহার করে। নাইট্রোজেনের জন্য ইউরিয়া ও ফসফাসের জন্য টিএসপি পটাশিয়ামের জন্য পটাশ সার ব্যবহার করা হয়। ন্যানো টেকনোলজির ন্যানো ফার্টিলাইজার ব্যবহার ফসলের ক্ষেতে ব্যবহারের মাধ্যমে গাছের গোড়ায় জমে থাকে যার ফলে গাছকে পুষ্টি সরবরাহ করতে সক্ষম হয়।
- বাংলাদেশের কৃষিতে ন্যানো টেকনোলজির ব্যবহৃত দিকগুলো হচ্ছে - রোগ নির্ণয, রোগবালাই ব্যবস্থাপনা, ন্যানো ফার্টিলাইজার, ন্যানো সেস্নর সহ ফসল উন্নয়ন জাত বিভিন্ন সব পদ্ধতি। যা ব্যবহারের ফলে কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধি পায় অনেক গুণ।
- রেফ্রিজারেটর তৈরিতেঃ রেফ্রিজারেটর তৈরিতেও ব্যবহার হয় ন্যানো টেকনোলজি। এই ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহার ফুলের রেফ্রিজারেটরের খাদ্য বহুদিন টাটকা থাকে।
- পানি বিশুদ্ধকরণেঃ পানিতে অনুজীব ছাড়াও আর্সেনিক সহ কীটনাশকের মতো রাসায়িক উপাদান মিশে থাকে। ন্যানো পার্টিকাল পানির ভিতরে থাকা এসব অনুজীবকে ধ্বংস করে এবং পানির রাসায়নিক অপদার্থগুলো দূর করে।
ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহারের ইতিহাস
ন্যানো টেকনোলজি, সর্বপ্রথম এই কথাটি ব্যবহার করেন টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের
বিজ্ঞানী নারীও তানিগচি। ১৯৫৯ সালের ২৯ জানুয়ারি রিচার্ড ফাইনম্যান সর্বপ্রথম
ন্যানো প্রযুক্তির ধারণা দেয়। আর এ কারণেই রিচার্ড ফাইনম্যানকে ন্যানো
প্রযুক্তির জনক বলা হয়। ১৯৮৯ সালের নভেম্বর ৯ তারিখ ন্যানো টেকনোলজির জন্য
একটা অন্যতম স্মরণীয় দিন হিসেবে বিবেচিত হবে। সেদিনই মানুষের পক্ষে অনুকে
ইচ্ছামতো সাজিয়ে পছন্দ মত কিছু তৈরি করা সম্ভব হয়।
ন্যানো টেকনোলজির সুবিধা
ন্যানো টেকনোলজির এমন সব সুবিধা রয়েছে যেগুলো হয়তো এখনো আপনার অজানা। এতক্ষণ
তো ন্যানো টেকনোলজির ব্যবহার সম্পর্কে তো জানলেন তাহলে এবার জানুন ন্যানো
টেকনোলজির সুবিধা সম্পর্কে -
- ন্যানো টেকনোলজির ব্যবহার শুরু হওয়া থেকে পরিবেশ দূষণমুক্ত হওয়া শুরু করেছে।
- ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহার করে কৃষি ক্ষেত্রে অনেক উপাদান বৃদ্ধি পেয়েছে।
- ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহার করে উৎপাদিত পণ্যগুলো অনেক মজবুত টেকসই ও আকারের ছোট হয়। ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহার করে চিকিৎসার ক্ষেত্রে অনেক বেশি উন্নতি হয়েছে যার ফলে চিকিৎসা সেবায় আরো নতুন সব উন্নত সেবা যোগ হয়েছে।
- ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহার ফলে মোটরযান ও শিল্প কারখানা হতে নির্গত কালো ধোঁয়াকে পরিষদিত করে নির্মল বায়ুতে পরিণত করা হচ্ছে।
- পানি বিশুদ্ধকরণ তৈরিতে অনেক উপকারী।
- খেলাধূলায় ক্রিকেট ও টেনিস বলের বিস্তারিত বৃদ্ধির জন্য ও বাতাসে গোলক বলের পজিশন ঠিক রাখার জন্য ব্যবহৃত হয় ন্যানোটেকনোলজি।
- ন্যানো ট্রাকনোলজির সাহায্যে সোলার প্যানেল ও ব্যাটারির আকৃতি আরো কম ও আকারে ছোট করা হয়।
ন্যানো টেকনোলজির অসুবিধা
প্রত্যেকটি জিনিসেরই ভালো দিকের পাশাপাশি কিছু খারাপ দিকে থাকে। তেমনি
ন্যানো টেকনোলজির অনেক সুবিধা থাকলেও এর কিছু অসুবিধা রয়েছে। তাহলে চলুন জেনে
আসা যাক ন্যানোটেকনোলজির অসুবিধা সম্পর্কে-
- ন্যানো টেকনোলজির গবেষণা ও প্রয়োগ বেশি ব্যয়বহুল। যে কারণে এই প্রযুক্তির প্রয়োগে উৎপাদিত পণ্য এখনো বেশ দামী ।
- ন্যানো টেকনোলজি পূর্ণমাত্রায় বিকশিত হলে আণবিক শক্তি সহজলভ্য হবে যার ফলে মানবজাতির জন্য সেটা বিপদজনক হতে পারে।
- ন্যানো প্রোডাক্ট মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
- তাছাড়া ন্যানো টেকনোলজি প্রযুক্তির ব্যবহার ফলে পানি ও বা দূষণ হতে পারে যা মানুষসহ অন্যান্য প্রাণির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
- ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহার বলে যারা অদক্ষ রয়েছে তারা কর্মহীন হয়ে যেতে পারে।
- এছাড়াও ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহারের ফলে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম ক্ষতি হতে পারে।
আমাদের শেষ কথা
ন্যানো টেকনোলজি কি এর প্রয়োগ ও ব্যবহারের সুবিধা অসুবিধা সহ বিভিন্ন বিষয়
সম্পর্কে বিস্তারিত জানলেন। আশা করছি এ পোষ্টের মাধ্যমে আপনি সুন্দরভাবে অনেক
কিছু জানতে পেরেছেন। ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই যেন জানা
মালের ক্ষতি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখবেন।
প্রিয় পাঠক,পোস্টটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই একটি কমেন্ট করে
জানাবেন এবং এসব তথ্য সেবা প্রতিনিয়ত পেতে আমাদের এই
WWW.multiplebd.come ওয়েবসাইটে নিয়মিত ভিজিড করুন। আর হ্যা,এ সকল
তথ্য সেবা আপনার বন্ধু কিংবা আশপাশের মানুষদের পৌঁছে দিতে অবশ্যই বেশি
বেশি শেয়ার করে দিন। এতক্ষণ সঙ্গে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
মাল্টিপল বিডির নিতিমালা মেনে কমেন্ট করুন । প্রতিটা কমেন্ট রিভিউ করা হয়
comment url